Topics

Quizzes

ফাইন্যান্স এর কঠিন বিষয় গুলি বুঝে নেই

Professional Finance

click click click click click





ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট- Infographics



ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট

অর্থনৈতিক জীবনে একজন মানুষ ঠিক কতটা ভাল করছে আর কতটা খারাপ, তা জানতে তার আয়-ব্যয় সম্পর্কে আমাদের ন্যূনতম একটি ধারণা থাকা দরকার। ঠিক তেমনি একটি কোম্পানি তার নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে ঠিক কতটা ভাল পারফর্ম করছে কিংবা কতটা খারাপ, সেটা জানতে হলে কোম্পানির আয়-ব্যয় সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা থাকতেই হয়। আয় কিংবা ব্যয়ের সম্পর্কে জানতে তাই কিছু ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা জরুরি। আজকের লেখা থেকে তিন ধরণের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সম্পর্কে একেবারে প্রাথমিক ধারণাটাই পাবো আমরা। একটি কোম্পানিতে মূলত তিন ধরণের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টের দেখা মেলে। ১। ইনকাম স্টেট্মেন্ট বা আয়ের হিসাব। ২। ব্যালেন্স শীট। ৩। ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট। এই তিন ধরণের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট থেকে একটি কোম্পানির আয়-ব্যয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। ইনকাম স্টেটমেন্ট বা আয়ের হিসাব ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টের মধ্যে শুরুতেই আসে ইনকাম স্টেটমেন্টের বিষয়টি। নাম থেকেই ধারণা করা যাচ্ছে, ইনকাম স্টেটমেন্ট থেকে মূলত কোম্পানির আয়ের উৎস এবং আয়ের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। ইনকাম স্টেটমেন্টের মূলত দু’টি ভাগ থাকে, একটিতে আসে রেভিনিউ বা আয়ের পরিমাণ, আর অন্যটিতে থাকে এক্সপেন্স বা ব্যয়ের পরিমাণ। একটি কোম্পানি মূলত তার পণ্য বিক্রি বা সেলসের মাধ্যমেই তার মূল আয়ের পরিমাণটা জোগাড় করে। তাই রেভিনিউ অংশে তোলা থাকে সেলস এবং তা থেকে প্রাপ্ত আয়। আর এক্সপেন্স অংশে আসে কাঁচামালের খরচ, উৎপাদনের খরচ ইত্যাদি। যেমন, স্টেশনারি পণ্য উৎপাদন করছে এমন একটি কোম্পানির আয়ের হিসেবে আমরা স্টেশনারি পণ্য বিক্রি বাবদ সেই কোম্পানির আয়ের পরিমাণটা দেখতে পারলেও ব্যয়ের হিসেবে স্টেশনারির কাঁচামাল, বিভিন্ন রিটেইল বা খুচরা বিপণন শাখায় পণ্য পরিবহনের খরচ, অফিস খরচ, কর্মচারী বা শ্রমিকদের বেতন ইত্যাদির হিসেব থাকবে। সেলস থেকে এক্সপেন্স বা ব্যয়ের পরিমাণ বাদ দিলেই কোম্পানির মোট লাভের পরিমাণ জানা যায়। এই হিসাব যতটা বিস্তারিতভাবে লেখা হবে, ততই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা লাভ করা যায়। যেমন, কোন কোম্পানির মোট প্রফিট বা লাভের পরিমাণ যদি হয় এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা আর অপারেটিং ব্যয় হিসেবে যদি খরচ হয়ে যায় চল্লিশ হাজার টাকা, তাহলে খুব সহজেই বোঝা সম্ভব যে, মোট লাভের দুই তৃতীয়াংশ কর্মীদের বেতন দিতে চলে যাচ্ছে। এই স্টেটমেন্ট থেকে তখন আমরা ধারণা পাবো, কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করলে ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানো সম্ভব। আয় এবং ব্যয়ের হিসাব পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায় বলেই ইনকাম স্টেটমেন্ট থেকে একটি কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব। ব্যালেন্স শীট অ্যাকাউন্টিং-এর সবচেয়ে প্রাথমিক ফর্মুলা হচ্ছে, Assets=Liability+Owner’s Equity Assets বা সম্পদ হচ্ছে যেকোন ধরণের মূলধন। মূলধন বলতে যে সবসময় নগদ টাকাই হতে হবে এমন নয়। পণ্য উৎপাদনের ফ্যাক্টরি, ফ্যাক্টরির জমিজমা, উৎপাদনের যন্ত্রাংশ- এ সবই অ্যাসেট বা সম্পদ হিসেবে ধরা হয়। Liability বা দায়ভারের মধ্যে পড়তে পারে লোন বা ধার পরিশোধ। Owner’s Equity-র মধ্যে ব্যবসা বা কোম্পানির মালিক যা যা ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সাপ্লাই কিনেছেন তার হিসাব ধরা থাকে। এ কারণেই ব্যালেন্স শীটের একপাশে অ্যাসেটস এবং অন্য পাশে লায়াবিলিটি ও ওউনার’স ইকুয়িটির যোগফল দেখানো হয়। ব্যালেন্স শীটের মূল উদ্দেশ্য হল এই দুই পাশের মধ্যে ব্যালেন্স বা সমতা রক্ষা করা। ব্যালেন্স শীটের এই দুই অংশের যোগফল সমান হলেই আমরা কেবল সেটিকে একটি ব্যালেন্সড ব্যালেন্স শীট বলতে পারি। লায়াবিলিটিও আবার দুই ধরণের হতে পারে, একটি স্বল্পমেয়াদী এবং অন্যটি দীর্ঘমেয়াদী। স্বল্পমেয়াদী দায়গুলো এক বছর সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করে দিতে হয়, যেমন- কর্মচারীদের বেতন। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী দায়ের মধ্যে সেই দায়গুলোই আসবে যা পরিশোধ করতে আপনি এক বছরের বেশি সময় হাতে পান। অ্যাসেটস কিংবা লায়াবিলিটিস, দুই ঘরেই সেই আয়-ব্যয়গুলো আগে লেখা উচিত যেগুলো সহজেই অর্থমূল্য হিসাব করা সম্ভব। নগদ অর্থের হিসেব তাই আগে উঠে আসবে, জমিজমা বা অন্যান্য যেসব জিনিসের অর্থমূল্য হিসাব করা অপেক্ষাকৃত কঠিন, সেগুলো নিচের দিকে লেখাই ভাল। ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট একটি কোম্পানির মধ্যে কত টাকা এলো এবং কত টাকা চলে গেলো- সেই হিসেবকেই সহজ কথায় আমরা ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট বলতে পারি। তিন পদ্ধতিতে মূলত একটি কোম্পানিতে ক্যাশ ফ্লো হতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে অপারেটিং ব্যয় বা আয়। পণ্য উৎপাদনের অপারেশনাল যেসব ব্যয় হতে পারে তার মধ্যে কর্মচারীদের বেতন সহ অন্যান্য লেনদেনের হিসেব অন্তর্ভুক্ত হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ। আর তৃতীয় পদ্ধতি হল ফাইন্যান্সিয়াল সোর্স থেকে ক্যাশ ফ্লো। ক্যাশ ফ্লো আমাদেরকে বলে কত টাকা কোম্পানির বাইরে গেলো এবং কত টাকা কোম্পানিতে এলো। কিন্তু এই ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট থেকে পরিপূর্ণ ধারণা করা সম্ভব না যে কোম্পানি কতটা ভাল পারফর্ম করছে আর কতটা খারাপ। যেমন একটি কোম্পানিতে হয়ত আমরা দুই কোটি টাকা ক্যাশ ইন দেখতে পাচ্ছি। এখান থেকেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় যে কোম্পানি খুব ভাল অবস্থায় আহে। এমনও হতে পারে, কোম্পানি কোন একটি নির্দিষ্ট সোর্স থেকে ক্যাশ জোগাড় করার পরেও সঠিক ইনভেস্টমেন্টের অভাবে টাকাটা অলস পড়ে আছে। তাই এই তিন ধরণের স্টেটমেন্ট থেকে আসলে কোন উপসংহার টানা সম্ভব নয়। তবে এই স্টেটমেন্টগুলো থেকে আমরা কিছু সংখ্যা পাই যা থেকে আমরা কোম্পানির পারফরম্যান্স অনুমান করতে পারি। একটি কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে তাই এই তিন ধরণের স্টেটমেন্ট সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার একজন বিবিএ ছাত্রের কিংবা একজন কোম্পানির মালিকের কিংবা ফাইন্যান্সে আগ্রহ থাকা যেকোন সাধারণ মানুষের!