আমার এক বন্ধু ছিলো, আমাদের বন্ধুদের যখনই কোথাও পিকনিক বা কোন প্ল্যানে চাঁদা তোলার ব্যাপার আসতো, আমার সেই বন্ধু সবসময় এড়িয়ে যেত। সে কোথাকার কোন ইমার্জেন্সি সেভিংস না কী, সেখানে নাকি সে আলাদা করে টাকা জমা রাখতো। আমরা খুব বিরক্ত হতাম আর হাসাহাসি করতাম। হঠাৎ আমার সেই বন্ধুর পরিবারের একজন অসুস্থ হয়ে গেলো। আইসিইউতে চার দিনের বিল আসলো দেড় লক্ষ টাকা। এখন এই টাকার হিসেব তো কখনো ওর ফ্যামিলি কোথাও করে দেখেনি বা ভেবেও পায়নি যে চার দিনের জন্যে দেড় লক্ষ টাকা লাগতে পারে। আগামী মাস আসতে তখনো বাকি ১৭ দিন, এখন কী উপায়? সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার সেই বন্ধু তার ইমার্জেন্সি সেভিংস থেকে সেইবার বেশ বড় অঙ্কের টাকা দিয়েছিলো। যদি সে এভাবে করে টাকা না জমাতো তাহলে তার ইমার্জেন্সি সেভিংসটা কি থাকতো বলো? আর তখন তার ফ্যামিলিকে কী সমস্যার মধ্যেই না পড়তে হতো। হয়তো ঋণ করতে হতো। হয়তো জমি বন্দক কিংবা বিক্রি করারও প্রয়োজন পড়তো। এত অল্প সময়ে এই কাজগুলো করাও বেশ ঝামেলার। এই এক ইমার্জেন্সি সেভিংসটা থাকাতে কতখানি সুবিধা হলো। বিলটাও মেটানো গেলো। পরিবারের কাউকে বাড়তি ঝামেলাও পোহাতে হলো না। কখন কোথায় টাকা লাগতে পারে, তা আমরা কেউ জানি না। এ কারণেই ইমার্জেন্সি সেভিংসের বিষয়টা আসে। যেটা থাকলে বিপদের সময় অনেকটা বন্ধু হিসেবে কাজ করে। তোমাদের কারো খেয়াল আছে কিনা, খুব ছোটবেলায় আমাদের মধ্যে মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর অভ্যাস ছিলো। এরপর যখন খুব দরকার পড়তো, সেই মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে টাকা বের করে খরচ করতাম। ইমার্জেন্সি সেভিংসের কনসেপ্টটাও অনেকটা মাটির ব্যাংকের মতোই। শুধু এখানে মাটির ব্যাংকের বদলে টাকা সেভ করতে পারো ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্টে। যখন দরকার পড়বে, তখন খরচ করবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন তোমার যেন এই সেভিংস থেকে কমপক্ষে ৩ - ৬ মাসের খরচ চলে আসে। যেমন প্রতি মাসের আয়ের এক তৃতীয়াংশ যদি জমাতে থাকো, তাহলে তোমার ৬ মাসের হাত খরচ আসতে সময় লাগবে ১৮ মাস। আর এই টাকাটা যে সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমাবে, এটা কিন্তু চাইলেই খরচ করা যাবে না। ডিফারেন্ট ব্যাংকে থাকলে বরং আরও ভালো। যখনই কোনো আনএক্সপেক্টেড ইনকাম অর্থাৎ অপ্রত্যাশিত উপার্জন হবে, সেটা এই ইমার্জেন্সি অ্যাকাউন্টে জমা করে ফেলবে। এটা তোমার ঈদের সালামির টাকাও হতে পারে আবার কোনো কম্পিটিশনে জেতা পুরস্কার কিংবা বৃত্তির টাকাও হতে পারে। আর প্রতি মাসের আয়ের থেকে সবার আগে একটা নির্দিষ্ট অংশ যে আলাদা করে সেভিংস একাউন্টে রাখবে, এটা তো বুঝতেই পারছো। তোমরা যদি Charls Duhigg এর “Power of Habit” বইটা পড়ে থাকো, তাহলে বুঝতে পারবে, অভ্যাসের কী পরিমাণ প্রভাব রয়েছে আমাদের জীবনে। আমরা সবাই কিন্তু আসলে আমাদের নিজেদের এই অভ্যাসগুলোরই সমষ্টি। তাই সেভিংস এর অভ্যাস এখন থেকেই শুরু করে দাও। যেটা তোমাকে আজীবন বিপদের সময় প্রকৃত বন্ধুর মতো পাশে থাকবে আর সাহায্য করবে বা যখনই কোন ইমার্জেন্সি টাকার দরকার পড়বে, তখন ধার করার জন্য কাউকে খুঁজতে হবে না। ধরো তুমি যদি তোমার এইচএসসি পরীক্ষার পরে যে ভর্তি পরীক্ষার ফি, সেটা যদি নিজেই দিতে পারো। তাহলে তোমার পরিবারের উপর চাপটা কিন্তু অনেক কমে যায়। তখন তোমার মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরী হবে যে, নিজের খরচ নিজেই দিচ্ছো। কিংবা ধরা যাক, তোমার যাতায়াতের জন্য একটা সাইকেল হলে খুব ভালো হতো। বাসা থেকে টাকা না নিয়ে তুমি কিন্ত সেভিং অ্যাকাউন্টে জমানো টাকা থেকেই সাইকেলটা কিনে ফেলতে পারো। নিজের টাকায় নিজে চলার মনোভাব যে তোমাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে, তা বলাই বাহুল্য। তাই বলছি ব্যাংকে সেভিং অ্যাকাউন্ট খুলে কষ্ট করে হলেও টাকা সেভ করো। ফিউচারে দেখবে এই সেভিং অ্যাকাউন্টের জন্য নিজে নিজেকে ধন্যবাদ দিচ্ছো।