একজন বিনিয়োগকারী কিভাবে একটি বন্ডের প্রাইমারি অকশনে অংশগ্রহন করবে?
বন্ডে বিনিয়োগ সাধারণত দুই ভাবে করা যায়: প্রাইমারি অকশন এবং সেকেন্ডারি মার্কেট। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মঙ্গলবার ট্রেজারী বন্ডের অকশন করে থাকেন। একটি মাসের কোন তারিখে কোন বন্ডে কত টাকার অকশন হবে তার তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক সেই মাসের একদম শুরুতেই প্রকাশ করে থাকেন। যে কেউ চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট এ (https://www.bb.org.bd/en/index.php/monetaryactivity/auc_calendar) যেয়ে, পরবর্তী কোন কোন বন্ডের অকশন আছে সেটা দেখতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ একজন বিনিয়োগকারী এই ওয়েবসাইট লিংকে যেয়ে দেখলো যে আগামী মঙ্গলবার ১,০০০ কোটি টাকা মূল্যের ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারী বন্ডের অকশন হবে।
একজন বিনিয়োগকারী এই অকশনে চাইলে অংশগ্রহণ করতে পারে। এর জন্য সবার প্রথমে তার একটি বি/ও একাউন্ট খুলতে হবে। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য যদি আগে থেকেই বি/ও একাউন্ট খোলা থাকে তাহলে সে একই বি/ও একাউন্ট ব্যবহার করে ট্রেজারী বন্ডের অকশনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
বি/ও একাউন্ট খোলার পর বিনিয়োগকারীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সে কত টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে ট্রেজারী বন্ডে আপনাকে সর্বনিম্ন এক লক্ষ টাকা অথবা এর গুণিতকে বিনিয়োগ করতে হবে। যেমন, আপনি ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন না। আপনাকে হয় ২ লক্ষ টাকা অথবা ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
একবার আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করবেন সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়ার পর, আপনাকে বন্ডের অকশন হওয়ার আগের কর্মদিবসে দুপুর ১২টার মধ্যে জানাতে হবে এবং এই সময়ের মধ্যেই পর্যাপ্ত অর্থ বি/ও হিসাবে থাকতে হবে। বিনিয়োগকারীর বি/ও হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে বিনিয়োগকারীকে বি/ও হিসাবে টাকা জমা দিতে হবে। আপনি যদি চেক জমা দেন, তাহলে তা আপনার বি/ও হিসাবে জমা হতে কিছু সময় লাগে। তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, একজন চেক জমা দিলে অকশন হওয়ার ৩ কর্মদিবস আগে, BEFTN এ Fund Transfer করলে ২ কর্মদিবস আগে এবং নগদ অর্থ জমা বা NPSB Fund Transfer করতে দিলে আগের কর্মদিবসে দুপুর ১২টার মধ্যে দিলেই হবে। ধরুন একজন বিনিয়োগকারী ৫ লক্ষ টাকা ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাকে অকশন এর পূর্ববর্তী কর্মদিবসে (সোমবার) দুপুর ১২টার মধ্যে তার বি/ও হিসাবে টাকা জমা করতে হবে।
প্রাইমারি অকশনের একটি বন্ড ফ্রেশ ইস্যু (যা কিনা একদম নতুন বন্ড) ও রি-ইস্যু বন্ড (পুরানো বন্ড আবার নতুন করে ইস্যু করা) হতে পারে। সাধারণত অকশনের আগের দিন জানানো হয়ে থাকে বন্ডটি ফ্রেশ ইস্যু নাকি রি-ইস্যু হবে। যদি ফ্রেশ ইস্যু হয় তাহলে বন্ডের কুপন রেট বাজারের সুদের হারের সমান হবে। আর যদি বন্ডটি রি-ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে বন্ডের কুপন রেট এবং বাজার সুদের হার দুইটি ভিন্ন হতে পারে। এখন এই বন্ডগুলোর বাজার রেট (মার্কেট রেট) নির্ধারণ করা হয় বিডিং এর মাধ্যমে।
আবার এই বিডিং (মূল্য প্রস্তাব) দুই রকমের হয়। প্রতিযোগিতামূলক (Competitive) ও অপ্রতিযোগিতামূলক (Non-Competitive)। Competitive Bidding এ অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন Yield Rate (মুনাফার হার) Quote করেন। বাজারের অবস্থা অনুযায়ী এই Yield পরিবর্তিত হয়। Non-competitive bidding এ কোন Yield Rate Quote করার কোন সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে Competitive Bid যারা করেছেন তাদের গড় (average) হারেই (Yield) Non-competitive bidder রা Bond পেয়ে থাকবেন। ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র অপ্রতিযোগিতামূলক (Non-Competitive) বিডিংয়ে অংশগ্রহণ করবে।
এটা উল্লেখযোগ্য যে, প্রতিযোগিতামূলক অকশন বিডিংয়ে বন্ড না পাবার একটি সম্ভাবনা থাকে যদি আপনি অনেক বেশি yeild rate বিড করে থাকেন, কিন্তু অপ্রতিযোগিতামূলক বিডিং এ এই ঝুঁকি অনেক কম এবং আপনার বন্ড পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যদি কুপন রেটের কথা বলি, তাহলে অপ্রতিযোগিতামূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক বিডিং এর কুপন রেটের মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি হয় না কারণ প্রতিযোগিতামূলক বিডিং এর বিডকৃত কুপন রেট্ গুলোর গড় হার নিয়েই অপ্রতিযোগিতামূলক বিডিং এর হার নির্ধারণ করা হয়।
সবশেষে বিনিয়োগকারী আইডিএলসি সিকিউরিটিজ এ ফোন করে অথবা মেইল করে তার বি/ও একাউন্ট নম্বর, কত টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন তা সেই বন্ডের অকশন এর আগের যেকোনো কর্ম দিবসে তার ব্রোকারেজ হাউজকে জানানোর মাধ্যমে প্রাইমারি অকশনের বিনিয়োগের কাজ সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন।